অবস্থান পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন

প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২১

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

পত্রিকান্তরে প্রকাশ যে দেশের কতিপয়/কয়েকজন আলেম (অন্যার্থে ধর্মীয় বিষয়াদিতে শিক্ষিত ও কওমি মাদরাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ব্যক্তি) ঈদের আগে গ্রেপ্তারকৃত ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে (আলেম পরিচয়ে পরিচয় দিয়ে) মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং ঈদের পরপরই কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার অনুমতি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। যাঁরা বিবৃতি দিয়েছেন তাঁরা সবাই (একজন ব্যতীত, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) বিভিন্ন কওমি মাদরাসার অধ্যক্ষ/শিক্ষক, যদিও তাঁরা পলিটিক্যাল আলেম কি না তা বোঝার কোনো উপায় নেই। তার পরও তাঁদের বিবৃতির বিষয়ে দু-একটি কথা না বলে পারা যাচ্ছে না (বা চুপ থাকা যাচ্ছে না)।

ক. যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের কি আলেম হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? নাকি নাশকতামূলক/ফৌজদারি অপরাধমূলক কাজের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে (যেমন—মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবিব প্রমুখ এবং তাঁদের সহকর্মীরা যাঁরা জিহাদে (কার বিরুদ্ধে) লিপ্ত বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন), তাঁদের কথা হচ্ছে? যদি নাশকতামূলক/ফৌজদারি অপরাধমূলক/রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কোনো অপরাধের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে, তবে তাঁদের মুক্তি চাওয়া কি কোনো শান্তিপ্রিয় নাগরিকের পক্ষে যুক্তিযুক্ত কাজ হবে?

খ. তাঁরা কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার পক্ষে দাবি জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে কওমি মাদরাসাও খুলে দেওয়া যায়। তবে প্রশ্ন থাকে যে কোন কওমি মাদরাসা? ১. যেখানে শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয় (ছেলে ও মেয়ে উভয়ই), ২. যেখানে জাতীয় সংগীত গাওয়া নিষিদ্ধ বা গাওয়া হয় না, ৩. যেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না, ৪. যেখানে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয় না, ৫. যেখানে মুক্তিযুদ্ধ/স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসসংবলিত বাংলাদেশ পাঠ (বাংলাদেশ স্টাডিজ) পড়ানো হয় না, ৬. যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, ৭. যেখানে শিক্ষার মাধ্যম এখনো উর্দু এবং ৮. যেখানে সংবিধানসহ রাষ্ট্রীয় ও সরকারি বিধি-বিধান একেবারেই উপেক্ষিত—সেসব কওমি মাদরাসার কথা বলা হয়েছে কি না, বিবৃতিদাতাদের বিবৃতি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় না। বিষয়গুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

আমরা মনে করি, উল্লিখিত ১ থেকে ৭ ধারা পর্যন্ত বিষয়গুলোর প্রশ্নে বিদ্যমান কওমি মাদরাসাগুলোর অবস্থান পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রভাষা বাংলা ইত্যাদি প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থানের বিষয়গুলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেও কওমি মাদরাসার ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

আমরা আরো মনে করি, ওপরে বর্ণিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে হেফাজতপন্থীদের ও কওমি মাদরাসা প্রসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ প্রয়োজন। রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে আমরা এই দাবি উত্থাপন করছি। আশা করি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের এই দাবিকে কেউ উপেক্ষা করবেন না।

লেখক: সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা,
পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা,
সম্পাদক, মত ও পথ।