কিংবদন্তি দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা।

প্রকাশিত: ১১:০৫ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২১

বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ অব্দি তাঁর মাপের দানশীল মানুষের জন্ম হয়নি। তাঁর মতো দানবীরের জন্মও গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে হয়েছে হাতে গোনা।
.
কিংবদন্তি দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা। 🙏
.
অতি দরিদ্র এক পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন, যে পরিবারে এক বেলা খাবার জুটতো তো বাকি দুবেলা উপোষ থাকতে হতো। তাঁর মা মারা গেলেন টিটেনাসে ভুগে। সেদিনই জীবনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন জীবনে দরিদ্র মা ও মহিলাদের জন্য কিছু করে যাবেন।
.
চৌদ্দ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে গেলেন একদিন। কাজ নিলেন হকারের। দিনে হাওড়া রেলষ্টেশনে পত্রিকা বিক্রি করতেন আর হোটেলে থালা বাসান মাজার কাজ করতেন।
হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে শরীর অল্পদিনেই কাহিল হয়ে পড়লো।
.
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরে যোগ দিয়ে চলে গেলেন ইরাক।
সেখানে তিনি হাসপাতালে এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের জীবন বাঁচালে তাঁকে স্বর্ণপদকের সঙ্গে নবপ্রতিষ্ঠিত (১৯১৬) বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন প্রদান করা হয়। যুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৯ সালে পঞ্চম জর্জের সাথে সাক্ষাতের আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড সফর করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে রেলওয়ে বিভাগে টিকেট কালেক্টরের চাকরি নিলেন।
.
১৯৩২ সালে চাকরিকে চিরবিদায় জানিয়ে নিজের জমানো টাকা ধার দেনা করে শুরু করলেন লবন ব্যবসা, কয়লার ব্যবসা। এরপর কয়লার ব্যবসা থেকে জাহাজের ব্যবসা, পাটের ব্যবসা, চামড়ার ব্যবসা, পাওয়ার হাউজ। পরিণত হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম ধনকুবের ও সম্পদশালী।
.
একদিকে টাকা আসতো তাঁর কাছে অন্যদিকে দান করতেন। তাঁর কাছে গিয়ে ফেরত এসেছেন এমন কোন অভাবী মানুষ নেই।
.
১৯৩৮ সালে টাঙ্গাইলে গড়ে তুললেন “কুমুদিনী ডিস্পেনসারি” নামের একটি ২০ শয্যার হাসপাতাল। সেটিই আজকের বিখ্যাত ৭৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুমুদিনী হাসপাতাল। যে হাসপাতাল দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতালগুলোর একটি।
.
কেবল এখানেই শেষ নয়। বিখ্যাত ভারতেশ্বরী হোমস তাঁর হাতে গড়া। যা ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আবাসিক বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি। মানিকগঞ্জের বিখ্যাত দেবেন্দ্র কলেজ গড়লেন তিনি বাবার নামে। মির্জাপুরে কুমুদিনী নার্সিং মহিলা স্কুল ও কলেজ, মির্জাপুর কলেজ, মির্জাপুর এস কে পাইলট বালক ও বালিকা বিদ্যালয় সবই তাঁর হাতে গড়া।
.
গড়ে তুললেন দেশের সবচেয়ে বড় ট্রাষ্ট “কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল”। তাঁর লাভজনক সকল প্রতিষ্ঠানের মোট আয়ের অর্ধেক ব্যয় করা হতো মানুষের কল্যাণে।
.
কেবল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় রনদা প্রসাদ সাহা দান করেছেন ৩ লক্ষ টাকা। যা আজকের বাজারে শত কোটি টাকারও বেশী। সারাদেশে ২৫০ র বেশী লঙ্গরখানা খুলেছিলেন মানুষ দুর্ভিক্ষে চারটা ভাত খেতে পারবে বলে।
.
১৯৭১ সালের আজকের দিনে ৭ই মে পাকিস্তানী শুয়োরের পাল হানাদারেরা তুলে নিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে দানবীর রনদাপ্রসাদ সাহা ও তাঁর ছেলে ভবানীপ্রসাদ সাহাকে।
.
আজ কিংবদন্তি দানবীর ব্যবসায়ী রনদা প্রসাদ সাহার শহীদ হওয়ার দিন। বিনম্র শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি। 🙏💞