জঙ্গিবাদের আদিরূপ ও বর্তমান অবস্থা

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২১

মোর্শেদ আলী ।। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জঙ্গিবাদ যে আকার ধারণ করেছে তাতে বিশ্বজুড়ে এক ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। যারা সভ্য দেশ ও স্থিতিশীল অবস্থার দাবিদার ছিল, সে সমস্ত দেশে হামলা, বোমা বিস্ফোরণ, মানুষ হত্যা ঘটেই চলেছে। আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়া থেকে দলে দলে লোক ইউরোপের দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইটালি, ইংল্যা-, জার্মানির মত দেশে উদ্বাস্তু হিসেবে খাদ্য, কাজ ও মাথা গোঁজার ঠাই’র জন্য গিয়ে হাজির হচ্ছে। পথে নারী-শিশুসহ অনেকে মৃত্যু বরণ করছে। এ সমস্ত অমানবিক দৃশ্য আজ তথাকথিত উন্নত দেশগুলোতে ঘটে চলেছে।

আমরা যদি পৃথিবীর মানুষের জীবন ধারণের ব্যবস্থা পরিবর্তনের ধারা লক্ষ্য করি তাহলে দেখব সমাজ সভ্যতা ও শিল্পায়নের উন্নতির সাথে সাথে সৃষ্টি হয় শ্রেণি বিভক্তি। উৎপাদনের কারখানা চালু রাখতে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস করে সৃষ্টি করা হয় বিশাল শ্রমিক শ্রেণি। দেশে দেশে গড়ে উঠে শ্রমিক শ্রেণি। মালিকরা শ্রমিকদের শ্রম দিয়ে বাড়তি মূল্য তেরি করে এবং এই বাড়তি মূল্য লুট করে নিজেদের সম্পদ দিনে দিনে বৃদ্ধি করে। নির্মম নির্যাতন চলতে শুরু হয় এই শ্রমিকদের উপর। শ্রমিকরা শ্রমের ন্যায্য মজুরি পায় না। আর এই ধনিক শ্রেণির সঙ্গে শ্রমিকদের দাবি ভিত্তিক লড়াই বাড়তে থাকে। কোনো কোনো সময় শ্রমিকরা মালিকদের শোষণ-নির্যাতনের প্রতিবাদে কারখানায় আগুন ধরিয়ে দিত। এভাবে ক্রমেই শ্রেণি সংগ্রাম গড়ে উঠে।

এক পর্যায়ে মালিক ও শ্রমিক উভয় শ্রেণি বুঝতে পারে যে এভাবে উৎপাদন ব্যবস্থা চলতে পারে না। পরে মালিক শ্রেণি নমনীয় হয়ে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার মেনে নেয়। এতে কিছু সমস্যা দূর হয় ঠিক কিন্তু সামাজিক অন্যায়-অত্যাচার বন্ধ হয় না। মালিকরা এক পর্যায়ে শ্রমিক শ্রেণি ও মেহনতি কৃষকদের শোষণ অব্যাহত রাখার জন্য, ক্ষমতায় আসীন থাকার জন্য ধর্মকে টেনে আনে মানুষের মধ্যে। সব ধর্মের মূল কথা মানুষের মঙ্গল। কিন্তু বাস্তবে শোষক-শাসকরা এই ধর্মকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে থাকে।

এসব লক্ষ্য করলে দেখা যায় ইতিহাস সরল রেখায় চলে না। নির্যাতন শোষণ লুটপাটের ধারার বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেণির সংগ্রাম কালক্রমে গড়ে উঠেছে। এটাকেই সমাজ বিজ্ঞানীরা শ্রেণি সংগ্রাম বলেছে। সম্পদশালি দেশগুলো পুঁজিতন্ত্রকে সুন্দর করে দেশে দেশে পুঁজিবাদি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং এ সমস্ত দেশ পৃথিবীর দুর্বল দেশগুলোকে শোষণ-লুণ্ঠন করার জন্য ক্রমে সাম্রাজ্যবাদী হয়ে উঠে। সাম্রাজ্যবাদই পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ রূপ। তবে ঐ সমস্ত দেশের শ্রমিক শ্রেণি, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবি মিলে এ শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে ক্রমেই সংগ্রাম ও সংগঠন গড়ে তুলে। এমনইভাবে ভি.আই লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণি সংগঠিত হয়ে গড়ে তোলে বলশেভিক পার্টি তথা কমিউনিস্ট পার্টি। পুঁজিবাদকে ধ্বংস করে সমাজতন্ত্র কায়েম করার লড়াই। ১৯১৭ সালে নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ার শাসক জারকে উৎখাত করে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখল করে। জারের সমর্থক দালাল গোষ্ঠী নানা প্রতিবপ্লবী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রুশ বিপ্লবকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। তবে এ সমস্ত প্রতিবিপ্লবী কর্মকাণ্ড রুখে দেয় কমিউনিস্ট পার্টির কমরেডরা। এরপর ভি.আই লেনিনকে হত্যা করার চেষ্টা করে। ১৯২১ সালে তার উপর গুলি চালায়। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদীরা বিপ্লবী রাশিয়াকে আতুর ঘরে গলা টিপে মারার জন্য নানা অবরোধ সৃষ্টি করে। সবশেষে রাশিয়ায় বিপ্লব সফল রূপ লাভ করে। এবং দুনিয়ার দেশে দেশে বিপ্লবী উন্মাদনা সৃষ্টি হয়। কারণ সমাজতন্ত্র হল গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ রূপ। লেলিনের লেখা বইতে আমরা তাই দেখি। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বকে পুঁজিবাদী বন্ধনে বাধতে চেষ্টা করে। দুনিয়াতে পুঁজিবাদ ও সামজতন্ত্রের দ্বন্দ্ব জোরদার হয়ে হয়ে উঠে। এবং এটাই বিশ্বে প্রধান দ্বন্দ্ব হয়ে উঠে।

কালক্রমে আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদীদের নেতা দেশ হিসাবে দাঁড়িয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ লুট করার জন্য সেখানের প্রগতিমুখী দেশের নেতাদের হত্যা করে এবং দেশগুলোর উপর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়। ক্রমেই ধ্বংস করে ইরাক, লিবিয়া এমনকি মিশরের উপর নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। অনেকেই তখন মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রে সুবাতাসের গন্ধ পায়। শেষ পর্যন্ত বারুদ্ধে গন্ধ দেশগুলোকে দুষিত করে। হত্যা করে ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনকে, লিবিয়ার নেতা গাদ্দাপিকে এবং এই দেশগুলোতে সিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব প্রকট করে তোলে। লিবিয়াতে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে লড়াইয়ে উৎসাহিত করে। বহু নর-নারী-শিশুর মৃত্যু হয়। এসব দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় আমেরিকার গোয়েন্দা বাহিনী সিআইএ।

যুদ্ধ এখনও চলছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ জোরদার করার জন্য সৌদি আরবকে দিয়ে এক ইসলামি রাষ্ট্রের জোট গঠন করে। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্টের তত্ত্বাবধানে এই জোট গঠিত হয়। মূল লক্ষ্য ইরানসহ একটু প্রগতিবাদী দেশগুলোকে জব্দ করার। এরপূর্বে ৭০ এর দশকে তারাকির নেতৃত্বে আফগানিস্তানে যখন প্রগতিশীল সরকার গঠিত হয়। আফগানিস্তানের এপ্রিল বিপ্লবকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে দিয়ে তালেবান বাহিনী গঠন করে প্রতিবিপ্লব ঘটায় এবং তালেবানরা আফগানিস্তানের সকল শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবকিছুকে ধ্বংস করে দেয়। তালেবান বাহিনী গঠনের সমস্ত টাকা পয়সা অস্ত্র সরবরাহ করে আমেরিকার বুশ সরকার। বর্তমানে পাকিস্তানিদের দ্বারা সৃষ্ট তালেবানরা আজ পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা অস্থির করে তুলেছে। ঐ সময় বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামসহ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলো অনেক না খাওয়া মানুষকে তালেবান ট্রেনিং এ পাঠায়। অনেকেই ট্রেনিং নিয়ে এসে দেশে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে সুযোগ নিচ্ছে। তারা নানা কায়দায় সংগঠিত হয়ে জঙ্গি বাহিনী গঠনে ব্যস্ত এবং হত্যা-গুম-ধর্ষণের মত কাজ করে বেড়াচ্ছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাছাড়া আমাদের দেশের সরকারি (বিভিন্ন সময়) দল কাজে লাগাচ্ছে তাদের।

দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না। গড়ে উঠেছে লুটপাট তন্ত্র আর এই সমস্ত লুটেরারা ধন সম্পদ বিদেশে পাচার করছে। উন্নয়নের নামে বর্তমানে যা চলছে তাতে কি দেশ খুব এগিয়ে চলেছে। বর্তমান সরকার এখন নানা বিদেশি শক্তির সাথে হাত মেলাচ্ছে যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। যেমন আমেরিকা, সৌদি আরব প্রভৃতি। ভারত আমাদের প্রতিবেশী ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু ঐ ’৭১ এর ভারতের সরকার আর বর্তমান সরকার এক নয়। বর্তমানে এটা পরিষ্কার যে বর্তমান মোদি সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে এসব দেশে গণতান্ত্রিক ও বাম রাজনীতির ব্যর্থতার জন্য বর্তমানের অবস্থা তৈরি হতে সুযোগ পেয়েছে। আমাদের দেশেও তাই।

বর্তমানে অস্থিতিশীল বিশ্বে কি পদক্ষেপ নিলে দেশের উন্নতি হবে তা বুঝতে সরকারি দৃষ্টি অনেক স্বচ্ছ হওয়া দরকার। দেশবাসীর উপর আস্থা থাকা দরকার। আর, আমেরিকা, সৌদি আরবের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এগুতে পারি না তা নয়। ভারত এখন ইসরাইলের সাথে ও আমেরিকার সাথে বেশি বন্ধুত্বের ভাব দেখাচ্ছে। সেটা কি সারা বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গলজনক? আমাদের দেশতো ছোট দেশ। কিছু সম্পদ আছে। গ্যাস উত্তোলনের আমাদের নিজস্ব শক্তি ব্যবহার করা উচিত। আমাদের প্রকৌশলীরা বিদেশে গিয়ে অনেক কাজ করছে। পরনির্ভরশীলতা কাটাতে হবে। তবে দেশে কাঙ্ক্ষি ত উন্নতি সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর ‘ব্রেন ড্রেন’ বন্ধ করার জন্য চিকিৎসক, প্রকৌশলীদের বিদেশে চাকরির অনুমতি দেয়া বন্ধ করেছিলেন। তার জন্য বহু সমালোচনা হয়েছিল তাঁর। তবে ঐ পদক্ষেপ সঠিক ছিল বলে আমরা মনে করি।

আমাদের দেশ একসময় ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল। তখন ব্রিটিশরা আমাদের যে সমস্ত উৎপাদনী শক্তি ছিল সেগুলো নষ্ট করে দিয়েছিল। তাদের দেশের কাপড় ও অন্যান্য দ্রব্যাদির বাজার গড়ে তোলার জন্য আমাদের দেশের তাঁতিদের আঙ্গুল কেটে দিত, যাতে উন্নত মানের কাপড় তৈরি না করতে পারে। কৃষিক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছামত ফসল করার জন্য চাপ দিত। যেমন তাদের প্রয়োজনে নীলচাষ করতে কৃষকদের বাধ্য করত। তারা তা না করলে চাবুক মারতো।

বর্তমানে সেরা শক্তির দাবিদার সারা বিশ্বে যারা যুদ্ধবিগ্রহ ঘটিয়ে চলেছে। যারা জঙ্গিবাদের হোতা, যারা সবরকমের গোলা বারুদ, কামান ও পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে শক্তি প্রয়োগের জন্য। যারা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা, নাগাসাকির উপর আনবিক বোমা মারতে দ্বিধাবোধ করে নাই। যার ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে বা পঙ্গু হয়ে গেছে। তারা এখন দেশে দেশে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিয়ে তা ঠেকানোর কথা বলছে। আমেরিকা দাবি করছে সে যা বলবে তাই সত্য এবং তাই মানতে হবে। সারা বিশ্বে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করে স্বল্প উন্নত দেশ বা গরিব দেশকে তাদের মনগড়া বাণিজ্য নীতি মানতে বাধ্য করছে। সর্বোপরি বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে তারা মুনাফার হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করছে, মানুষের মঙ্গলের জন্য নয়। এক সময় সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচারের বিরুদ্ধে পঞ্চশীলা নীতির ভিত্তিতে মিসরের জামাল আব্দুল নাসের, ইন্দোনেশিয়ার সূকর্ণ, কঙ্গোর পেট্রিস লুমুম্বা, ভারতের নেহেরু মিলে জোট গঠন করেছিল। তা সাম্রাজ্যবাদীরা টিকতে দেয় নাই। ষড়যন্ত্র করে হত্যা করে লুমুম্বাকে, ইন্দোনেশিয়ার সূকর্ণকে এর পরবর্তী সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্ধিরা গান্ধীকে। এই হচ্ছে সাম্রাজ্যাদের জঙ্গিবাদ ঠেকানোর নমুনা। শেখ সাহেবকে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রগতির পথ বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়।

তবে আওয়ামী লীগের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়। খন্দকার মোশতাক তো আওয়ামী লীগের নেতা ছিল। সে পাকিস্তান ও আমেরিকানদের পক্ষে স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করে, সঙ্গে সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা যুক্ত হয়। তাছাড়া বাংলার ইতিহাসে সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকাণ্ড ও পলাশির যুদ্ধ এরকম ষড়যন্ত্রের ফল। সেখানে মীরজাফর ছিল এবং উমি চাঁদের মত মন্ত্রীসভার লোক মূখ্য ভূমিকায় ছিল। এদের সহযোগিতায় ব্রিটিশরা বাংলার স্বাধীনতা হরণ করে। ব্রিটিশ সরকার পাক ভারতকে ভাগ করার জন্য দ্বিজাতিতত্ত্ব আবিষ্কার করে এবং হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাধায়। দাঙ্গার ফলে বহু মানুষের প্রাণ যায়। বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে যায় এবং ব্রিটিশসহ সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণের সুযোগ হয়ে যায়। ব্রিটিশদের তল্পীবাহক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে দিয়ে মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং গান্ধীর মত জাতীয়তাবাদী নেতা কংগ্রেস গঠন করে। ভারতবর্ষকে ভাগ করে ধর্মভিত্তিক দুইটি রাষ্ট্র করা হয়। নেতাজি সুভাষ বোস ও কমিউনিস্ট পার্টি এ ভাগ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।

সর্বোপরি বলতে হয় বর্তমান সভ্যতা পর্যন্ত বিশ্ব বহু পর্ব পার হয়ে এসেছে আদি সাম্যবাদী সমাজ, দাস যুগ, সামন্ত যুগ এবং এরপর ধনবাদী যুগ। প্রতিটি যুগ উৎপাদন এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হলে ঐ যুগের মধ্যে পরবর্তী যুগের ভ্রুণ তৈরি হয়ে থাকে। একমাত্র পুঁজিবাদের মধ্যে সমাজতন্ত্রের ভ্রুণ হয় নাই। নির্যাতন, নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র হয় শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে। লক্ষ্যণীয় সব ব্যবস্থার পরিবর্তন কোনো না কোনো শ্রেণির কর্তৃত্বের উপর নির্ভরশীল। এর ফাঁক দিয়ে জঙ্গিবাদ সুযোগ করে নিয়েছে। ফলে আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে হলে প্রয়োজন স্বাধীনতার মূল্যবোধ অটুট রাখার জন্য মেহনতি ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী শক্তির দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলা।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ধর্মবাদী যুগে বুর্জোয়া শ্রেণির কিছু প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল। তারাই বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে। তবে মানুষের উপর মানুষের শোষণ অব্যাহত থাকে। মানুষের ভাত, কাপড়, জমি, কাজের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। এমন বুর্জোয়া গণতন্ত্রের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের তফাত এখানে যে সমাজতান্ত্রিক সমাজে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার নিশ্চয়তা থাকে এবং শ্রমিক শ্রেণির কর্তৃত্ব বজায় থাকে- মেহনতি মানুষের জীবন যাত্রায় দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার বিস্তার ঘটে। সেখানে জঙ্গি-কর্মকাণ্ডের সুযোগ থাকে না। মনে রাখতে হবে জঙ্গিবাদ বুর্জোয়া সমাজের অনুসঙ্গ অর্থাৎ তাদের সৃষ্টি। তাই সমাজের প্রগতিশীল পরিবর্তন ছাড়া জঙ্গিবাদ বন্ধ হবে না।

লেখক : সদস্য, কন্ট্রোল কমিশন, সিপিবি সুএ সাপ্তাহিক একতা