হেফাজতি জংলি ফুল মামুনুল বলেনি কবুল কবুল

প্রকাশিত: ২:১১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০২১

পীর হাবিবুর রহমান


হেফাজতি জংলি ফুল মামুনুল কোথাও বলে না কবুল কবুল। নারী কেলেঙ্কারিতে ধরা খেলে বলে কেবল শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছি। ইনি হলেন দ্বিতীয় স্ত্রী, তিনি হলেন তৃতীয় স্ত্রী। কোনোটারই তথ্য-প্রমাণ গণমাধ্যমে হাজির করতে পারেননি। তবে দিয়েছেন নজিরবিহীন মিথ্যাচারের নির্লজ্জ ফতোয়া। বলেছেন, ‘স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখতে সীমিত পরিসরে সত্য গোপন করা যায়।’ মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবাকে ঘুমন্ত রেখে গোপন অভিসারে সোনারগাঁর রিসোর্টে প্রথম যে নারীকে নিয়ে ধরা খেলেন তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। সহিংসতা ঘটিয়ে রক্তের ওপর দিয়ে প্রমোদবিহারে রিসোর্টে গিয়ে ঝর্ণাকে ভোগ করলেন প্রথম স্ত্রীর নামে রেজিস্টার খাতায় নাম লিখিয়ে। অসততা, মিথ্যাচার তার শুরুতেই। বউকে ফোন করে বলেছিলেন আমাদের শহীদুল ভাইয়ের স্ত্রী। ঝর্ণার টেলিফোন অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। মামুনুলের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। এমনকি ঝর্ণার প্রথম পক্ষের সন্তান মায়ের ডায়েরি ফাঁস করেছেন। দেখা যাচ্ছে কাবিন দূরে থাক হেফাজতি জঙ্গি নেতা মামুনুল কবুল বলে কোথাও ঝর্ণাকে বিয়ে করেননি। জান্নাতকে নিয়ে দুনিয়াতেই ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিলেন। ডিভোর্সের পর জান্নাত আরা ঝর্ণাকে অর্থনৈতিক খরচ দিয়ে ভোগ করে আসছেন। জান্নাত আরা ঝর্ণার কাহিনির ইতি টানা হয়নি। মামুনুল জান্নাতুল ফেরদৌসি লিপি নামে আরেক ডিভোর্সি নারীকে নিয়ে গোপন জীবন কাটাচ্ছেন। এই নারীর ভাই মোহাম্মদপুর থানায় বোনের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছেন এবং দাবি করেছেন মামুনুল নাকি তাকে জানিয়েছেন, তিনি তার বোনকে বিয়ে করেছেন। সব মহলে প্রশ্ন- এমন বিয়ে মামুনুল কতটি করেছেন? তিনটি প্রকাশিত হয়েছে। আর একটি প্রকাশিত হলে চার বিয়ে পূর্ণ হবে নাকি তার আরও কাহিনি বাকি থাকবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে তার চরিত্র কতটা ভেজালে ভরা, কলঙ্কে ভরা, লিল্লাহর টাকায় ভোগে ভরা সেটি উন্মোচিত হয়েছ

মামুনুল যেমন উগ্র জঙ্গি সাম্প্রদায়িক একজন মানুষ তেমন তার প্রতারণায় ভরা অসততার যে চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে তাতে আর যাই হোক কেউ তাকে আলেম বলবে না। মামুনুলের বা হেফাজতের ভক্তরা এত অন্ধ এবং বোধবুদ্ধিহীন, বিবেক তাদের এতটাই রুদ্ধ যে তারা মামুনুল বা হেফাজতের কোনো সমালোচনা সহ্য করতেই পারে না। বদ্ধ উন্মাদ অন্ধরা তাদের নবী-পয়গম্বরদের মতো নিষ্পাপ ভাবার ভ্রান্তিতে ভুগছে। চিন্তাই করে না এরা মাদরাসায় শিক্ষকতা করে জীবন কাটানো সাধারণ মানুষ। ইসলাম, মুসলমান এক কথায় ধর্মকে তারা ব্যক্তিগত দুনিয়াদারির বাণিজ্যিকীকরণে ব্যবহার করে থাকে। ধর্ম এদের জীবিকা নির্বাহের পথই নয়, রাজনীতির বড় হাতিয়ার। এরা ধর্মের বাজিকর বা ধর্মব্যবসায়ী

সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রতিটি মুসলমানকে নত হতে হয় এবং তিনিই শেষ বিচারের মালিক। আমাদের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশনা আর পবিত্র কোরআনই একজন মুসলমানের ধর্মচর্চার পথ। সেখানে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম সত্যকেই মহান করেছে। শান্তির বাণীকেই সুললতি করেছে। মিথ্যা-প্রতারণাকে জায়গা দেয়নি। যদিও মামুনুলরা মিথ্যা-প্রতারণারই আশ্রয় নিয়েছেন। হেফাজতি জংলি মামুনুলই নন, ওয়াজের নামে যখন-তখন যাকে-তাকে কাফের বলে নানামুখী উসকানি দিয়ে সমাজে অশান্তির আগুন ছড়ানো একদল ‘হুজুর’ এমন আচরণ করেন যে মনে হয় বেহেশতের টিকিট তারা নিশ্চিত করেছেন। আর সহজ-সরল মানুষকে বেহেশতে যেতে হলে তাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রকাশই নয়, অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হবে। অথচ তারা নিজেরাও জানে না শেষ বিচারের দিন ইয়া নফসি ইয়া নফসি করতে করতে তাদের পরিণতি কী হবে। ভাগ্যে পাপ না পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে। বেহেশতের অবারিত সুখ ভোগ করবেন নাকি হাবিয়া দোজখের আগুনে দাউদাউ করে পুড়বেন। একমাত্র সর্বশক্তিমান মহান দয়াময় আল্লাহ রব্বুল আলামিন তা ভালো জানেন। মামুনুল হক ও হেফাজতকে নিয়ে আগের লেখা প্রকাশের পর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী শান্তিপ্রিয় মুসলমানসহ নানা ধর্মের মানুষ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। অনেকে টেলিফোনে, মন্তব্যে বলেছেন সময়োপযোগী লেখা। উগ্র সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে রুখে দাঁড়াতে উজ্জীবিত করার মতো লেখা। কিন্তু মামুনুল বা হেফাজতের উগ্র সমর্থকরা এত অন্ধ যে তারা কোনো যুক্তি মানে না। হেফাজতে ইসলাম যে মুসলমানের ইসলাম নয়, এটা তাদের রাজনীতির উগ্র জঙ্গি সংগঠন তা বুঝতে ভুলে গেছেন। হেফাজত ও মামুনুলের কট্টর সমর্থকরা মাথায় টুপি পরে এত নোংরা গালিগালাজ করেছেন যে গা শিউরে ওঠে। এ অসভ্যতাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এ নোংরা গালিগালাজের শিক্ষা যে ইসলাম দেয় না তাও তারা ভুলে গেছেন। এমনকি গালি দিতে দিতে তাদের কেউ কেউ আমার মৃত্যু পর্যন্ত কামনা করেছেন। পৃথিবীর কোনো পূতিগন্ধময় রাস্তার পাশেও যে গালিগালাজ কখনো শোনা যায় না সেসব হেফাজত ও মামুনুলের উগ্র সমর্থকদের মুখে ভেসে আসে। এ নোংরা শিক্ষা তাদের পরিবার প্রতিষ্ঠান নাকি সমাজ দিয়েছে জানি না। তবে আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুন। অন্ধকার, অন্ধত্ব বর্বরতা থেকে তারা মুক্তি পাক। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান আল্লাহভীরু, ধর্মপ্রাণ এবং মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্যলাভে ইমান নিয়ে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইবাদ-বন্দেগিসহ সব নির্দেশনা পালন করলেও তারা উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকে। এসব ঘৃণা করে। মানুষ হত্যা, সমাজে অশান্তির আগুন ছড়ানো, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলাকে ঘৃণার চোখে দেখে। তারা মহান আল্লাহর ইসলামকে অনুসরণ করে। কোরআন তিলাওয়াত করে, মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ অনুসরণ করে এবং শান্তিপ্রিয় বিনয়ী জীবনযাপন করে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গৌরববোধ করে এবং বাঙালি জাতির সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে লালন করে। হেফাজত ও মামুনুল হকের উগ্র সমর্থক যারা গালাগালিতে দুর্গন্ধ ছড়ায় তাদের অজু থাকে কি না, এ নিয়ে বিস্তর সন্দেহ থেকে যায়। নাকি কেবল উগ্র জঙ্গি রাজনীতির অন্ধত্বে তাদের এমন বিকৃত আচরণ- এ প্রশ্ন এসে যায়।

মামুনুল হক ও তার কথিত স্ত্রী জান্নাতের টেলিফোন রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর এ অন্ধ বধিররা বলেছিল, এসব মামুনুলের চরিত্রহননের জন্য ফেক তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মামুনুল যখন লাইভে এসে বললেন, তার টেলিফোন কথাবার্তা ফাঁস করা হয়েছে তখন তারা বেলুনের মতো চুপসে গেলেন। ভক্ত হওয়া ভালো, অন্ধ হওয়া নয়। বিচার-বুদ্ধি-বিবেচনা থাকলে অন্ধ মোহে আটকে থাকতে হয় না।

হাটহাজারী মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের সর্বশেষ সভায় সংগঠনের আমির জুনাইদ বাবুনগরী যিনি উগ্রতায় পাঁচ কদম এগিয়ে তিনি বলে দিলেন, মামুনুলের রিসোর্টের ঘটনা তার ব্যক্তিগত বিষয়। মানে হেফাজতের নেতা হলে নৈতিক চরিত্র থাকতে নেই? জবাবদিহির প্রয়োজন নেই? কামুক বিকৃত পুরুষ হিসেবে একজন ডিভোর্সি নারীকে ভোগ করে যাওয়ার পর এত বড় কেলেঙ্কারি হওয়ার পরও তাকে হেফাজত থেকে বহিষ্কার করা যাবে না! সে তো বিয়ের কোনো তথ্য-প্রমাণই দিতে পারেনি। বরং যেসব বের হয়ে এসেছে তা একজন আলেম দূরে থাক, সাধারণ মানুষের জন্য অনৈতিক ও লজ্জার। ধর্মও এটাকে পারমিট করে না। আসলে হেফাজতের দরকার উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গি মামুনুলের। কোনো আলেম-ওলামার নয়। এ দেশের মানুষ সব সময় আলেম-ওলামাদের সম্মান-শ্রদ্ধা করে আসছে। কিন্তু হেফাজত, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি ধর্মের নামে মাদরাসা থেকে যা জন্ম দিয়েছে, যে নেতৃত্ব ও কর্মী তৈরি করেছে তারা আলেম হওয়ার স্বপ্ন দেখেনি। জঙ্গি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সমাজ-রাজনীতি-প্রশাসন সব অশান্ত করে রেখেছে। তাই কোনো বহিষ্কার নয়, উল্টো সন্ত্রাসের জন্য, উসকানির জন্য যারা গ্রেফতার হয়েছে বাবুনগরী তাদের মুক্তি চেয়েছেন। কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আইন মানবেন না, সংবিধান মানবেন না, থানায় হামলা চালাবেন, সরকারি অফিস-আদালত ভাঙচুর করবেন, সংস্কৃতির আলোকিত ঘর পুড়িয়ে দেবেন, জাতির পিতার ম্যুরাল শাবলে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভাঙবেন, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা চালাবেন, বেসরকারি রিসোর্টে ভাঙচুর চালাবেন, ওয়াজে জবাই করে হত্যার হুমকি দেবেন আর আইন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে এমনটা হতে পারে না। আইনের হাত অনেক লম্বা। এটা উগ্রবাদীদের বুঝতে হবে।

রাষ্ট্রের জমিতে মাদরাসা তৈরি করবেন, সরকারি বিদ্যুৎ, গ্যাস ব্যবহার করবেন, এক যুগ ধরে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কাবিটা নেবেন, বরাদ্দ নেবেন আবার সরকারকে চ্যালেঞ্জ করবেন, রাষ্ট্রের আদর্শ ও চেতনার বিরুদ্ধে বিষের আগুন জ্বালাবেন তা তো হতে পারে না।

উগ্র হেফাজতিদের একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এরা মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সুমহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী উগ্র জঙ্গি সংগঠন। এদের দুধ-কলা দিয়ে যতই পুষে রাখা হোক না কেন বিষধর সাপ ছোবল মারবেই। বারবার এটা প্রমাণিত হয়েছে। আইনের ঊর্ধ্বে সংবিধানের ঊর্ধ্বে এদের উঠতে দেওয়া যায় না। কওমি মাদরাসায় হেফাজতের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। কোনো শিক্ষাঙ্গনে কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ হয় না। আলিয়া মাদরাসা, জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম, ইংরেজি মাধ্যমের সঙ্গে কওমি মাদরাসাকেও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন কারিকুলামে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ব্রিটেনেও মাদরাসা শিক্ষা বহাল কিন্তু মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। এখানেও তাই করতে হবে। অন্যান্য শিক্ষাঙ্গনের মতো শিক্ষক নিয়োগ থেকে সার্বিক পরিচালনার নীতিমালা থাকতে হবে। জঙ্গি উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি তৈরির জন্য কওমি মাদরাসাকে আলাদা রাখা যাবে না। মাদরাসার শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা তুলে অনাবাসিক করে দিতে হবে। এমনটি না হলে জঙ্গির হাতে জঙ্গি তৈরি হবে। এটা রাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। দাওরায়ে হাদিস শিক্ষাকে মাস্টার্স সমতুল্য করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি করেছেন অনেকে। নতুন করে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ঢেলে সাজাতে হবে। দেশে ওয়াজ হবে। কিন্তু উসকানি, সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বাতাস ছড়ানো যাবে না। এটা শক্তিশালী মনিটরিংয়ে রাখতে হবে। মাদরাসার কোমলমতি ছাত্রদের যখন তখন যে কোনো উগ্র হঠকারী ইস্যুতে রাজপথে নামিয়ে সহিংসতা ছড়ানোর পথ বন্ধ করতে হবে। এক কথায় মাদরাসাকে আর উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বা জঙ্গি তৈরির কারখানায় পরিণত করা যাবে না। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি ইতিহাস-সংস্কৃতির পাঠ দিতে হবে। প্রতিটি কওমি মাদরাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আমাদের দেশ যেনতেনভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ রক্তঝরা স্বাধিকার-স্বাধীনতার সংগ্রাম রয়েছে। জীবনের ১৩টি বছর তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। বারবার ফাঁসির মুখে ঝুলেছেন। আপস করেননি। সেই সংগ্রামে সব ধর্মবর্ণের মানুষ জীবন দিয়েছে। সেদিনও ধর্মের নামে, ইসলামের নামে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে বীর বাঙালি জাতির পিতার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থেকেছে। ধর্মের বাজিকর পাকিস্তানের দালালরা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে নৃশংসভাবে। আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে। বিজয়ের সঙ্গে গভীর বেদনা জাতির ইতিহাসে জড়িয়ে আছে। সেদিনও মুক্তিযুদ্ধকালে তথাকথিত ইসলামপন্থি দলগুলো একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়েছে। গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হয়েছে। এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে পরিবার-পরিজনসহ হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত রাষ্ট্রীয় আদর্শ নির্বাসনে দেওয়া হয়। ইতিহাস বিকৃতির চরম নির্লজ্জ চর্চা শুরু হয়। আর সাম্প্রদায়িক দানবশক্তির উত্থান ঘটে। আজ মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের বিস্ময়কর রোল মডেল। স্বল্পোন্নত থকে উন্নয়নশীল দেশ। করোনার মতো মহামারীর বিরুদ্ধে গোটা জাতি লড়াই করছে। সকালে মৃত্যুসংবাদ রাত নামলেই শোকসংবাদ। আক্রান্ত বাড়ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। একেক পরিবারে স্বজন হারানোর কান্না। এমন সময়ে হেফাজত নামের জঙ্গিদের তাণ্ডব চলছে। কঠোর লকডাউনেও বাবুনগরী মাদরাসা খোলা রাখার ঔদ্ধত্য দেখান। রাজনীতিতে হতাশাগ্রস্ত বিএনপি যেখানে রণকৌশল নিয়ে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ সেখানে হেফাজতের উগ্র হঠকারী পথ দেখলেই লাফ দেয়। নিজেদের নিজস্ব রাজনীতির রণকৌশল নিতে পারে না। এমনকি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত তো আছেই। আছে তাদের অর্থায়ন। এমনকি ’৭১-এর পরাজিত ব্যর্থ রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার প্রসারিত হাতও আছে। এমনি অবস্থায় এ দানবশক্তিকে করোনার পাশাপাশি রুখতে হবে। অবাক লাগে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু কর্মী বহিষ্কার হয়েছেন হেফাজতের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখে। আজকের আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে কতটা ছিটকে পড়েছে ক্ষমতার অন্ধ মোহ ও অর্থবিত্তের ভোগবিলাসের লোভে তারই আলামত দেখা যায়। আওয়ামী লীগের এত এমপি কোথায় ছিলেন? এত মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানরা কোথায়? সবাই নিজ নিজ এলাকায় জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধের ডাক দিলে হেফাজতের মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির নেতা-কর্মী সমর্থকরা দাঁড়ানোর সাহস পেত না। আজ সময় এসেছে এ জঙ্গি উগ্রদের রুখে দাঁড়ানোর। প্রতিরোধ করার। গণজাগরণ ঘটানোর। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন করা শক্তি কখনোই হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে পারে না। এদের জন্য সহানুভূতি দেখাতে পারে না। এদের সহায়তায় ক্ষমতার স্বপ্ন দেখতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত লাখো শহীদের রক্তে ভেজা মাটিতে, বঙ্গবন্ধুর রক্তে ভেজা বাংলাদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিদের ঠাঁই হতে পারে না। এরা বাড়াবাড়ি করতে পারে না। এদের অবাধ বিচরণভূমি হতে পারে না। এদের প্রতিরোধ করতে হবে। আইনের আওতায় এনে যেখানেই এদের

অন্যায়-অপরাধ সেখানেই শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হেফাজতকে ইসলামের ইজারাদার করা হয়নি। নিজেরা নিজেরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াবে, সমাজে অশান্তির আগুন জ্বালাবে, আইন হাতে তুলে নেবে, যা খুশি তাই করবে, তাণ্ডবের মহাপ্রলয় ঘটিয়ে রক্ত নিয়ে খেলবে আর প্রশাসন বসে থাকবে তা হয় না। এদের ধরতে হবে। এদের রুখতে হবে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উগ্র জঙ্গিদের ঠাঁই নেই, ঠাঁই হবে না।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।