ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রকাশিত: ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে দেদারছে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে ১০-১২ বছরের জন্য উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে এসব আবাদি জমি। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদন।স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে দেদারছে ভেকু মেশিন দিয়ে এসব ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিজয়নগর উপজেলায় ৩০টির বেশী ইটভাটা রয়েছে। গত নভেম্বর মাস থেকে এসব ভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে।

এতে প্রতিটি ভাটায় প্রয়োজন মাটি। আর এ সুযোগেই উপজেলার,চান্দুরা,রামপুর,রসুলপুর,ভাটিকালীসিমা,সাপুটিয়া,সাতগাঁও,কেনা,সেমরা,বুধন্তী,শশৈই,ইসলামপুর,সাতবর্গ,মির্জাপুর,পাইকপাড়া,সহদেবপুর,বাগদিয়া,দাড়িয়াপুর,লতিফপুর,মুকুন্দপুর,পাহাড়পুর সহ আরো অনেক এলাকায় ভেকু মেশিনের মাধ্যমে ট্রাক্টর দিয়ে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। আর জমির মালিকরা না বুঝেই তা ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন।এতে জমির উর্বরতা কমতে শুরু করলেও এ কথা স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের জানানো হচ্ছে । বুধন্তী ইউপির ইসলামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,মাটি ব্যবসায়ী আব্বান মিয়া ফসলি জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রায় ৮-১০ ফিট গভীর করে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। এতে পাশের জমির মালিকদের ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। তারা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। এতে বাধা দিতে গেলে মাটি ব্যবসায়ীরা উল্টো বিভিন্ন হুমকি দেন।

এ ব্যাপারে মাটি ব্যবসায়ী আব্বান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে চান্দুরার কালিসীমা এলাকার মাটি ব্যবসায়ী আবুল বাশার ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,আমার মতো বিজয়নগরে শতশত ব্যবসায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে,আগে তাদের বন্ধ করতে বলেন তারপরই আমি বন্ধ করবো। গভীর করে মাটি কেটে নেয়ায় পাশের জমির ক্ষতির কথাও স্বীকার করেন তিনি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে চান্দুরার এক ইটভাটা মালিক জানান,কৃষক তার ফসলি জমির টপ সয়েল ইটভাটায় বিক্রি করা মানে ওই কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি করা। তিনি বলেন,বিজয়নগরে এখন চলমান প্রায় ৩০টি ’ ইটভাটা রয়েছে। আর এসব ভাটার ইট তৈরি করার জন্য বিজয়নগরের বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটিই সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.খিজির প্রাং জানান, সরকারি নিয়ম মেনে কেউ ইটভাটা তৈরি করতে পারবে না। তাই অনিয়মের মধ্যেই বিজয়নগরে অনেক ইটভাটা তৈরি হয়েছে। এসব ভাটার জন্য মাটির প্রয়োজন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমির টপ সয়েল তারা কেটে নিচ্ছে। এ টপ সয়েল বিক্রি বন্ধ করার জন্য কৃষকদের বললেও শুনছেন না। এছাড়া অবৈধ মাঠি ব্যবসায়ী ও ইটভাটা গুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলে তিনি জানান।