বিভীষিকাময় রক্তাক্ত ২১ আগস্ট – গ্রেনেড হামলা দিবস বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৮:৩৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২০ আজ বিভীষিকাময় রক্তাক্ত ২১ আগস্ট। সভ্য জগতের অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এইদিনে; এদিন শেখ হাসিনার জনসভায় চালানো গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। যা ঘটেছিল সেদিন ২১ আগস্ট, ২০০৪। দিনটি ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোচ্ছিলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড। মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হলো জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তগঙ্গা বয়ে যায় এলাকাজুড়ে। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা। বিষয়টি বুঝতে পেরে ট্রাকে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতারা ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যাকে। নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও সৃষ্টিকর্তার রহমতে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান শেখ হাসিনা। আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটাতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা, গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ কেড়ে নিতে না পেরে ওদিন শেখ হাসিনার গাড়িতে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়েছিল ঘাতকরা। পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান। নারকীয় এই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচ- শব্দের কারণে বাম কান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাম কানে শ্রবণশক্তি হারান শেখ হাসিনা। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার এতদিন পরও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারনেনি তিনি। পরিকল্পিত হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনা ফিরে এলেও সেদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এই ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার পর সেদিন স্পিস্নন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন বহু মানুষ। আকস্মিক মৃত্যু আর রক্তস্রোতে শান্তিপ্রিয় অসংখ্য মানুষের হাত-পাসহ মানবদেহের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। কারও হাত নেই, কারও পা উড়ে গেছে। রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কালো পথ। অস্থায়ী সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে রক্তের আল্পনা, শত শত মানুষের চিৎকার। বেঁচে থাকার জন্য, প্রাণ বাঁচানোর জন্য মুমূর্ষুদের আকুতি, কাতর আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য। সেদিন যদি ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড জনসভার জন্য ব্যবহৃত ট্রাকে বিস্ফোরিত হতো তবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কোন সিনিয়র নেতাই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। আর এটাই ছিল ঘাতকচক্রের মূল পরিকল্পনা। নিহত হন যারা ২১ আগস্টের সেই রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। আর এ হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট মারা যান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত অন্যরা হলেন মোসতাক আহম্মদ সেন্টু, শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), হাসিনা মমতাজ রীনা, রিজিয়া বেগম, রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, লিটন মুন্সী, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন সর্দার, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। আহত হয়েছিলেন যারা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য) জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, ঢাকার সাবেক মেয়র (প্রয়াত) মো. হানিফ, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কাজী জাফর উল্লাহ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা আখতার, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মলি্লকসহ ৫ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ আহত হন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে অনেকে কিছুটা সুস্থ হলেও পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে আছেন অনেকে। সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। দেহে অসংখ্য ঘাতক স্পিস্নন্টারের তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় রয়েছেন আহতরা। আহতদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ঢাকার সাবেক মেয়র মো. হানিফ দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান। Related posts:বিজয় দিবসে নাশকতার ছক, ২০ শিবির কর্মী আটকভাগিনার ছুরিকাঘাতে মামা নিহতনাপা সেবনের ১৫ মিনিটের মধ্যে রিঅ্যাকশন করা রহস্যজনক: ঔষুধ প্রশাসনের তদন্ত দল Post Views: ৩৮২ SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: