সাংবাদিকতা বাণিজ্যের’দেশীয় সংস্করন বিজয়নগর বিজয়নগর নিউজ প্রকাশিত: ৪:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২০ আত্মসমালোচনা ছাড়া কোনো মানুষ সংশোধিত হয় না। তাই নিজ পেশার হতশ্রী অবস্থা নিয়ে না লিখলে বোধ করি আমরা শুদ্ধ হবো না। পাঠক এ জন্য আমায় ক্ষমা করবেন। আত্মসমালোচনা ছাড়া কোনো মানুষ সংশোধিত হয় না। তাই নিজ পেশার হতশ্রী অবস্থা নিয়ে না লিখলে বোধ করি আমরা শুদ্ধ হবো না। পাঠক এ জন্য আমায় ক্ষমা করবেন। সাংবাদিকতায় একটি স্বত:সিদ্ধ কথা রয়েছে: শুদ্ধতা হচ্ছে এ মহান পেশার প্রধান অঙ্গ। ‘সাংবাদিকতা বাণিজ্যের’ ভিড়ে তা আজ ক্রম অপসৃয়মাণ। পঙ্গু হয়ে গেছে সেই মূল অঙ্গ। শুদ্ধতার মধ্যে ঢুকে পড়েছে দুর্নীতি। হতশ্রী দেশীয় এ সাংবাদিকতাকে অনেকে ভুল করে বলেন, ‘হলুদ সাংবাদিকতা’। কিন্তু আমি বলি, ‘অপ-সাংবাদিকতা’ যার মধ্যে বাণিজ্যের কারুকলা নিহিত। আরো স্পষ্ট ও সরাসরি করে বললে বাক্যটি দাঁড়ায়- সাংবাদিকতার নামে ভণ্ডামি, যা পেশা নয়, অসুস্থ ব্যবসা। দেশ যখন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তখন কোনো পেশাই তা থেকে বাদ যায় না। দরিদ্রতম দেশে দুর্নীতির প্রকোপ অপেক্ষাকৃত বেশি। আমাদের দেশেও সেই হাওয়া বেশ কয়েক বছর ধরেই। তবে সাম্প্রতিককালে দুর্নীতিতে আমরা বেশ ভালো ফল লাভ করতে সমর্থ হয়েছি! এই দুর্নীতি আমাদের সাংবাদিকতাকেও এখন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। ফলে শিক্ষা পেশার মতো সাংবাদিকতাকে আজকাল মানুষ তিরস্কার করছেন। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে এ পেশা সম্পর্কে নানা নেতিবাচক মন্তব্য অনেকের কাছে শুনতে হয়। কেউ যদি বলেন, অমুক সাংবাদিক মন্ত্রণালয়ে তদবির-বাণিজ্য করে এতো টাকা বা সম্পদের মালিক হয়েছেন! পেশার বাইরে অমুক সাংবাদিকের মাসিক রোজগার এতো লাখ টাকা। অমুক গ্রুপ থেকে অমুক সাংবাদিক এতো টাকা মাসোহারা পান। এসব জিজ্ঞাসায় আমার সান্ত্বনাসূচক অসহায় উত্তর একটাই— সাংবাদিকরা তো দেশ-মানচিত্রের বাইরে নন। আজকের এ নিবন্ধ কয়েকজন ধান্দাবাজ, হলুদ সাংবাদিক এবং অপ-সাংবাদিককে ঘিরে, যারা সাম্প্রতিককালে এ মহান পেশাকে কলুষিত করে রেখেছেন, অপেশাদার মনোভাব তৈরি করে সাংবাদিকতা-বাণিজ্য চালু করেছেন। ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় এর আধুনিক সংস্করণও এরই মধ্যে সৃষ্টি করেছেন তারা। এমন একজনের কথা বলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর নিয়ে যখন পেশায় এলেন তখন বোদ্ধারা ভেবেছিলেন, তিনি এ দেশে সাংবাদিকতায় পেশাদার পরিবেশ তৈরি করবেন। কিন্তু না, তা হয়নি। দেশীয় সংবাদপত্রের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে সংবাদ কাঠামোর ক্ষেত্রে তিনি একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করলেও তৈরি করলেন কিছু অসৎ রিপোর্টার, যারা আজ দেশের সংবাদপত্রে পুনর্বাসিত! তিনি এই সেই …….. খ্যাত সম্পাদক ও প্রকাশক, স্যাটেলাইট টিভিগুলোর টকশোতে তাকে নিয়মিত দেখা যায়। ভালো কণ্ঠস্বর, তবে চরিত্র তার কোকিলের মতো। নিজে লিখতে জানেন না, তার জ্ঞানগর্ভ বয়ান তার পক্ষে লিখে দেন পারিশ্রমিকভোগী কয়েকজন কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক! এমন একজন যিনি আশি দশকের অন্যতম কবি হিসেবে খ্যাত, তিনি তার মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন সম্প্রতি প্রকাশিত তার কলাম গ্রন্থে। ‘অর্ধসত্য’ নামের বইটিতে কবি অত্যন্ত তীর্যকভাবে তার অনৈতিক কার্যক্রমকে কটাক্ষ করেছেন। ফি-বছর ‘সংবাদপত্রের দোকান’ খোলেন তিনি। তার দৈনিকে যারা কাজ করেন তাদের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য হলো, বেতন হবে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। বাকিটা মাঠ পর্যায় থেকে কামাই করে নিতে হবে! তবে শর্ত আছে, উর্পাজিত সেই ‘মালের’ অর্ধেক ভাগ দিতে হবে। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক মিলিয়ে বর্তমানে তিনি কমপক্ষে ১০টি কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক। বহু নারীর পাণি গ্রহণকারী এবং কলকাতার নামি-দামি সাহিত্যিক দাদাদের আশ্রয়ে বাংলাদেশি এক বিতর্কিত লেখিকার প্রাক্তন স্বামী এই ভদ্রলোক এক সময়কার ছাত্রীকে বিবাহ করে তার গর্ভস্থ সন্তানদের সুদূর কানাডায় রেখে এসেছেন। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বনকারী পিতার অন্যতম ‘বুদ্ধিজীবী’ পুত্র তিনি! বেশ কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিকটির পক্ষ হয়ে সম্পাদক গিয়েছেন বিদ্যুৎ কার্যালয়ের প্রধান দফতরে। উদ্দেশ্য, বিজ্ঞাপন বা অন্য ধান্দা করা। সঙ্গে সুন্দরী তরুণী। পরিচালক কর্মকর্তার সঙ্গে তাকে পরিচয় করে দিয়ে বললেন, ‘ও আমাদের জনসংযোগ কর্মকর্তা। এখন থেকে সে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে। আপনি ভাই ওকে ব্যবহার করতে পারেন।’ পত্রিকা ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত মালিকদের তহবিল তছরূপ এবং অপ-সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি (সম্পাদক ও প্রকাশক) বিশাল সম্পদের মালিক! এবার আসি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে একাধিকবার পুরস্কৃত এক রিপোর্টার প্রসঙ্গে। যিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিট করেন। ১০ বছর আগে সহকর্মীদের বলতেন, সাংবাদিকতা পেশার রোজগারে তার চলে না। পত্রিকার সহকর্মী সেই রিপোর্টারের এখন ইটের ভাটা এবং অন্যান্য ব্যবসাও রয়েছে। রাজধানীর ইস্কাটনে ১০ বছর আগে ২০০০ স্কয়ার ফিটের অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। সে সময় তিনি একজন প্রবীণ সহকর্মীর স্ত্রীকে বলেছিলেন, তার গিন্নির নাকি কসমেটিক ও পারফিউম বাবদ মাসিক খরচ ৪মাসিক খরচ ৪০ হাজার টাকা! এক যুগেরও বেশি সময ধরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তদবির ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত এক সাংবাদিক। যিনি দৈনিক, পাক্ষিক ও মাসিক মিলিয়ে মোট ৬টি অনিয়মিত পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। সম্প্রতি তিনি আরেকটি গাড়ি কিনেছেন। এখন তিনি প্রায় কোটি টাকা মূল্যের গাড়িতে চলাফেরা করেন। দেশের শেয়ারবাজারে কোটি টাকার ওপরে লগ্নি করেছেন। বেশ কয়েকজন সচিবের সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক! বকলম (ঠিকমতো লিখতে জানেন না) এই ব্যক্তির ওপর গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সিনিয়র সচিবের আশির্বাদ রয়েছে। সেই সুবাদে ব্যাংক, অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বিভিন্ন শিল্প গোষ্ঠীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে অবাধ যাতায়াত রয়েছে তার। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-চাকরি, পদোন্নতি, বদলি, তহবিল সংগ্রহসহ নানা বাণিজ্যে ফেঁপে ফুলে উঠেছেন তিনি। রাজধানির প্রাইম লোকেশনে বেশ বড় আয়তনের একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়াও ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে জমি রয়েছে তার। পাঠক এ রকম আরো অনেক হলুদ বা অপ-সাংবাদিকের উদাহরণ এখানে দেওয়া যাবে। দুভার্গ্যজনক যে, আলোচ্য সাংবাদিকেরা সবখানে আলোচিত ‘ব্যক্তিত্ব’! কি পরিবারে, কি সমাজে, কি রাষ্ট্রে? সৎ পেশা জেনেই লোভনীয় এবং নিরাপদ চাকরির ছেড়ে এসেছি সাংবাদিকতায়। পরিবারের কাছেই আমি এখন প্রশ্নবিদ্ধ! দিন আনতে পান্তা ফুরায় এমন যখন অবস্থা, সেখানে অসহায় ও ‘ভূমিহীন’ এই অধমের কাছে প্রিয়জনদের জিজ্ঞাসা: ‘কোন আশ্রয়ে আমাদের রেখে যাচ্ছো তুমি?’ আবারো বলছি, এ লেখায় কেউ ব্যথিত হলে আমায় ক্ষমা করবেন। আমি চাই, আমাদের সাংবাদিকতা পেশা যেন আগের সৎ ও নির্ভীক চেহারায় ফিরে আসে। লেখক অর্থনীতি বিষয়ে সাংবাদিক সুএ বাংলা নিউজ ২৪ Related posts:বিজয়নগরে মানবাধিকার দিবস পালিতব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিতবিজয়নগরে দাউদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত Post Views: ২১৭ SHARES গণমাধ্যম বিষয়: