জানাজায় লাখো মানুষ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসন কি দায় এড়াতে পারে?

প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২০

বিজয়নগরনিউজ ।। শনিবার সকাল ১০টায় সরাইল উপজেলার বেড়তলা এলাকার জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা মাঠে দেশ বরেণ্য এই আলেমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠে জায়গা না হওয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অন্তত দুই কিলোমিটার অংশে জানাজার নামাজ পড়েন লাখো মানুষ। সরাইল থানার ওসি সাহাদাত হোসেন জানান, এত মানুষ হবে, আমরা বুঝতে পারিনি। লোকজন আসতে শুরু করার পর আমাদের আর কিছু করার ছিল না। জানাজায় অংশ নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মোটর সাইকেল, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক্টর ও ট্রাকে করে মানুষজন এসে জড়ো হন। অনেকে জেলা শহর থেকে পায়ে হেঁটেও জানাজার মাঠে গিয়েছেন। এদিকে, লকডাউনের কারণে রাস্তায় জনসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে জেলার বিভিন্ন সড়কে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে জেলা পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের এই নিরাপত্তা চৌকি পেরিয়ে কীভাবে লকডাউন ভেঙে এত মানুষের সমাগম হলো জানাজায়? প্রশাসন কী করেছে? বিষয়টি নিয়ে সচেতনমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বিশাল এই জনসমাগমের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাগরিক সংগঠনের নেতারা। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত জেলায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন দুজন। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিবেককে কবর দিয়ে আবেগে কাজ করি। এটি (জানাজায় লাখো মানুষের জড়ো হওয়া) একটি উদাহারণ। এখন আবেগ দেখানোর কোনো অবকাশ নেই। সারা বিশ্ব এখন থমকে গেছে। বাড়িতে থেকেও তো দোয়া করা যেত। প্রশাসনের এটি দেখার দরকার ছিল। যখন দেখছে প্রচুর মানুষ আসছে, তখনই বাধা দেওয়ার দরকার ছিল। অন্যদিকে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মঈনুল ইসলাম খন্দকার বলেন, জানাজার এই জনস্রোত হুজুরের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। আমরা ভাবিনি, এত মানুষ হবে। লোক বেশি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে আমরা দুপুরে জানাজা করতে পারতাম। লকডাউনের কারণে আমরা জানাজার জন্য ছোট জায়গা বেছে নিয়েছি। কিন্তু এরপরও লোকজন এসেছে, আমরা তো তাড়িয়ে দিতে পারি না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আমরা ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সামজিক দূরত্বের বিষয়টি বজায় রাখবেন। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন চলে এসেছে। অনেকে ধর্মীয় বিষয়ের কথা বলেছে, সেক্ষেত্রে কাউকে তো জোর করে পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে পারে না। পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠিচার্জ করে কিংবা জোরপূর্বক কিছু করার সুযোগ নাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, তারা আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেননি। বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এবং মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) তাদেরকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি এবং তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন, নির্ধারিত নিয়ম মেনেই সীমিত পরিসরে তাদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। এখন প্রকৃত বিষয়টি কী, তা আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে।