জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের উদ্বোধন

প্রকাশিত: ১১:১৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯

বিজয়নগর নিউজ। জাতীয় প্রেসক্লাবের গ্রন্থাগারে ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’ যুক্ত হয়েছে। শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকালে ক্লাবের সবুজ চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্নারের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) শামসুল আরেফিন। আরও বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মতিউর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, মাহফুজ আনাম, সৈয়দ দিদার বখত, হাসান শাহরিয়ার, মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, হারুন হাবীব, মনজুরুল আহসান বুলবুল, স্বপন সাহা, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, মুনীরুজ্জামান, আলমগীর মহিউদ্দিন, শরীফ শাহাবুদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, ওমর ফারুক, আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, জাকারিয়া কাজল, শাবান মাহমুদ ও সোহেল হায়দার চৌধুরী। উপস্থাপনা করেন প্রেসক্লাবের লাইব্রেরি ও রেফারেন্স উপকমিটির আহ্বায়ক শাহনাজ বেগম। সকাল সোয়া ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হয় ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ গানটির মধ্য দিয়ে। এরপর পরিবেশন করা হয় ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’। শিল্পী স্বপন কুমার দাশ ও শ্রাবণী শর্মার দ্বৈত কণ্ঠের পরিবেশনায় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাই গেয়ে ওঠেন এক সুরে। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে মেজর (অব.) শামসুল আরেফিন বলেন, আমরা অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি জানতে ও প্রকাশ করতে আগ্রহী। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব সরকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন, তারা কীভাবে সংগ্রাম করেছেন, সেটাও আজকের প্রজন্মকে জানানো জরুরি। এটা করা হলে সেই সময়ের আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে তিনি অভিমত দেন। তিনি তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধে সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সবুজ চত্বরে মুক্ত আলোচনা শেষে দোতলায় গ্রন্থাগারে ফিতা কেটে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার উদ্বোধন করেন মেজর (অব.) শামসুল আরেফিনসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কমান্ডের আলোচনা : আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কমান্ড। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ দাবি জানান। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তারা আন্দোলনে নামবেন বলেও ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবাল ও নিজামউদ্দিন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক হারুন হাবিব, মুহাম্মদ শফিকুর রহমানসহ অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, বর্তমান মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় সামাজিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকা অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম নেই। মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবাল বলেন, একাত্তরে তিনি যে সেক্টরে যুদ্ধ করেন সেখানে প্রথম সরাসরি যুদ্ধে জীবন দেন নাজমুল হাসান। তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি কোনো খেতাব পাননি। পরে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছেন। সেই যুদ্ধে তার আরও তিন ভাই শহীদ হন। অথচ গেজেটে তাদের কারও নাম নেই। তারা কোনো ভাতাও পান না। তিনি আরও বলেন, গেজেট বানানোর দায়িত্ব নাকি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার। জামুকার কাছে শহীদদের তালিকা তৈরি করা হয় কীভাবে, জানতে চেয়েছিলেন। তারা জানায়, তাদের কাছে কেউ তো আবেদন করেনি। তাদের কাছে দরখাস্ত করে শহীদদের তালিকা দিতে হবে, এটা দুঃখজনক। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়। সেখানে কোনো জানালা ছিল না, ওই একটা রুমের মধ্যেই সবকিছু করতে হতো। সেই সব দিনের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা বলে বোঝানো সম্ভব না।