আজ ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন

প্রকাশিত: ৮:২৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০১৯

২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। ভারতের বাইরেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানাভাবে দিনটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ আমরা যারা শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে; সশস্ত্রতা, হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানির বিরুদ্ধে; তারাও সশ্রদ্ধচিত্তে আজকের এই দিনে মহাত্মা গান্ধীকে স্মরণ করছি। সমগ্র বিশ্ব যখন আজ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে শিহরিত, মারণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, হিংসা-দ্বেষ আর হানাহানিতে বিপর্যস্ত – তখন তাঁর শিক্ষার গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা যায়।

মহাত্মা গান্ধী বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। সেই সাথে এ কথাও নিঃসন্দেহ বলা যায় যে, যে কয়জন মহামানব বিশ্ব ইতিহাসকে গড়ে তুলেছেন তিনি তাদের অন্যতম। তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর দর্শন ও তাঁর কর্ম সমকালীন বিশ্বে অনন্য ও অতুলনীয় আভা বিস্তার করে গেছে এবং আজকের বিশ্বও তাঁর দর্শন ও কর্মের অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে। শুধু তাই নয়, তাঁর কর্মধারা অনুসরণ করে অনেকেই ইতিহাসে নিজস্ব আসন করে নিচ্ছেন। মার্টিন লুথাং কিং জুনিয়র বা নেলসন ম্যান্ডেলা- ইতিহাসের দুই অনন্যসাধারণ সংগ্রামী মানুষ, যারা মহাত্মা গান্ধীর দর্শন ও কর্ম অনুসরণ করে নিজেরাও মহাত্মায় পরিণত হয়েছেন।

আজকের দুনিয়ায় তাঁর দর্শন ও কর্মের অনুসরণ যে কত আবশ্যক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগীতা সশ্রস্ত্রতায় রূপ নিচ্ছে। আলোচনা, সমঝোতা, সহাবস্থান ইত্যকার প্রত্যয়গুলো ক্রমশ আমাদের এ বিশ্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এতে করে পৃথিবী দিনদিন হিংসাশ্রয়ী হয়ে পড়ছে। আর এখানেই মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষার গুরুত্বও দিনদিন অনভূত হচ্ছে। তাঁর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে সমঝোতা, সহমর্মিতা ও সহাবস্থানের একটি দুনিয়া গড়তে না পারলে মানবজাতির অগ্রগতি ও উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে পড়বে।

হিংসার বদলে অহিংসা, দুঃশাসনের বদলে সুশাসন, সশস্ত্রতার বিপরীতে সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টির বিকল্প নেই। নতুন পৃথিবী গড়তে হলে, পারমানবিক অস্ত্রহীন পৃথিবী গড়তে হলে গান্ধীবাদে না ফিরলেও মহাত্মার ‘অহিংস’ দর্শন থেকে শিক্ষা নিতেই হবে।

মহাত্মা গান্ধী রাজনীতিতে অহিংসা ও সত্যাগ্রহ কৌশল অবলম্বন করে রাজনীতির নীতি ও কৌশলে পরিবর্তন এনেছিলেন। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত রাজনীতি শুরু থেকেই সশস্ত্র ও সহিংস ছিল। কিন্তু গান্ধী হিংসাকে পরিহার করে হিংসাকে মোকাবেলা করার যে পথ ও কর্মধারার অনুসরণ করেন, তা ইতিহাসে অভূতপূর্ব ও অনন্য। তাঁর পূর্বে হিংসাকে মোকাবেলার অহিংস পথ বেছে নেবার একমাত্র উদাহরণ হযরত ইসা (আ.) এর জীবনে পাওয়া গেলেও তা ছিল নিতান্তই ধর্মাশ্রয়ী ও রাজনীতি বিবর্জিত। রাজনীতিতে শক্তির মোকাবেলায় সহিংস পথ পরিহার করে চলার নীতি তিনিই প্রথম গ্রহণ করেছিলেন।

একথা সত্য যে, মহাত্মার জীবনাদর্শ আমাদেরকে খুব কমই আকর্ষণ করতে পেরেছে। এবং এ কারণে মানবেতিহাসের সবচেয়ে বেশি বৈষয়িক উন্নয়ন সত্ত্বেও পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ক্রমশ হুমকির সম্মুখীন। তাই আমরা মনে করি গান্ধীর শিক্ষাকে আমাদের কাজে লাগানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে সর্বত্রই যদি আমরা তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে পারি, তাহলে আমাদের উন্নয়নকে স্থায়িত্ব দিতে পারব। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে ভারত তথা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের সাথে মিলে আমরা, বাংলাদেশের শান্তিকামী মানুষও তাঁর স্মৃতির প্রতি আমাদের সুগভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।