আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তিস্তা সেচ প্রকল্প

প্রকাশিত: ৯:৫১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০১৯

নীলফামারী প্রতিনিধি : দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে সেচ সুবিধা পেতে শুরু করেছেন উত্তরাঞ্চলের খরাপীড়িত মানুষ। এতে চলতি আমন মৌসুমে খরা মোকাবিলায় এটি কৃষকের কাছে আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রথম পর্যায়ে চালু থাকা ৭১০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ক্যানেল জুড়ে সেচের পানি থই থই করছে। এখন প্রতিদিন ৩৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার প্রধান ক্যানেল, ৭৪ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার মেজর সেকেন্ডারি সেচ ক্যানেল, ২১৪ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সেকেন্ডারি ক্যানেল ও ৩৮৭ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার টারশিয়ারি ক্যানেলে ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর ৫ হাজার কিউসেক করে সেচ পাচ্ছেন কৃষক।

পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাব এবং অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। পাশাপাশি রোপণকৃত আমনের চারা পানির অভাবে বিনষ্ট হতে বসেছে, এমন এলাকায় এখন তিস্তা সেচ প্রকল্পের সেচ প্রবেশ করেছে। তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প সূত্র বলছে, উজান থেকে পানি আসছে। ব্যারেজ পয়েন্টে এখন পানির উথাল ঢেউ। পানিতে যেমন ভরে উঠছে নদী, তেমনি ৭১০ কিলোমিটার জুড়ে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের সকল সেচ ক্যানেল পানিতে টইটম্বুর।

তবে ক্যানেল সংস্কারের বরাদ্দ পাওয়ার পরও তা সংস্কারের কাজ শেষ করতে না পারায় সৈয়দপুর ও দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর ও পার্বতীপুর উপজেলা এই সেচ থেকে বঞ্চিত। ওই সকল কৃষকরা সেচের জন্য সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে ধর্ণা দিয়েও সুফল পাচ্ছেন না।

রংপুর কৃষি অঞ্চল কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় চলতি ২০১৮-১৯ মৌসুমে পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারীতে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৫৮ হেক্টর, রংপুরে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৫৯ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৪ হাজার ৮৪৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৪৯ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৭৩ হেক্টরসহ মোট পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমি রয়েছে।

সূত্র মতে, গত শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল গড়ে ২ হাজার কিউসেক। কিন্তু চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ দাঁড়ায় ৯০ হাজার কিউসেকে। তবে চলতি আগস্ট মাসে উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ চলছে গড়ে ২৫ হাজার কিউসেক। এতে নদীর পানি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে সরবরাহ করতে কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না।

তিস্তা সেচ ক্যানেল এসওয়ানটি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিচয় হতে বসেছে। এমন সময় তিস্তার সেচ ক্যানেলের পানি আমন ধানের ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে।

তিনি আরও বলেন, সেচ ক্যানেল সংস্কার না করার কারণে প্রচুর পানি থাকলেও কৃষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ক্যানেলে ময়লা আবজনা ও ঝোপ ঝাড়ের কারণে পানি আসতে বিড়ম্বনা হচ্ছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বলেন, চলতি মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওয়ার ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ইতোমধ্যে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট জমিতে সেচ প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমন মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজ কৃষি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

তিস্তা ব্যারেজের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ প্রধানত খরিপ-২ মৌসুমের জন্য নির্মিত। অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিলে কৃষকরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ পাবেন। যাতে আমন ধান তারা পরিপূর্ণভাবে আবাদ করতে পারেন। বর্তমানে অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে কৃষক। তাই এই মৌসুমে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে।